Health experience | Write here | Write and share your health experience to help community.

গাউট বা বাতের ব্যাথার চিকিৎস্য ও এর প্রতিরোধ

Fahima Akter Wednesday, January 12, 2022


গাউট হলো এক ধরনের বাত। যেটাকে মেটাবলিক ডিজঅর্ডারও বলা যেতে পারে। গাউট সাধারণত পায়ের জয়েন্টে ব্যাথা সৃষ্টি করে। শরীরে ইউরিক এসিডের স্ফটিক জমা হওয়ার কারণে জয়েন্টে গাউট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে । পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই গাউট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মেনোপজের পরে মহিলারা ক্রমশ গাউটের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। মানুষের শরীরে থাকা রক্তে অত্যাধিক ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে যার ফলে গাউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শুধু যে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড থাকলেই গাউট হবে ব্যাপারটা এমন নয়৷ যে ব্যক্তির অতিরিক্ত ওজন, যে ব্যক্তি উচ্চ পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করে এবং খুব বেশি মাংস ও মাছ খায় তাদের গাউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 


গাউটের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে হচ্ছে- জয়েন্টে ফোলা, লালভাব এবং তীব্র রাতে শরীরে ব্যাথা। গাউটের কারণে সৃষ্ট ব্যাথা সাধারণত তীব্র হয়, যা জয়েন্টে প্রদাহের তীব্রতাকে প্রতিফলিত করে। গাউটের সবচেয়ে সাধারণ পয়েন্ট হল বুড়ো আঙুল। যখন গাউট হালকা, এবং কম জটিল হয় তখন অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে পুষ্টিকর খাদ্যভাস এবং জীবন যাএার মান উন্নয়ন করতে হবে। সাধারণত মাঝরাতের দিকে এই গাউটের ব্যাথার প্রবনতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এতো বেশি ব্যাথা হয় যে, অনেকে সেই ব্যাথা সহ্যই করতে পারে না৷ মাংস, সামুদ্রিক খাবার এবং অ্যালকোহলের গ্রহণের পরিমান অবশ্যই সীমিত করতে হবে। কারণ এই সব গ্রহণের ফলে রক্তে ইউরিক এসিড অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে গাউট হওয়ার প্রবনতা তখন আরো বেড়ে যায়। 




গাউটের কারণ ও লক্ষণ

প্রথমত রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের কারণে গাউট হয়ে থাকে বলে ধারণা করেন অনেকে৷ এই অবস্থা হাইপারুরিসেমিয়া নামেও পরিচিত। মানুষের দেহ যখন পিউরিন ভেঙ্গে ফেলে, তখন তারা ইউরিক এসিড তৈরি করে। গাউটের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-  


১/ লিঙ্গ এবং বয়স : সাধারণত মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড বেশি দেখা। ৫০ বছরের বেশি বয়স থেকে গাউটের প্রবনতা বেশি দেখা দিয়ে থাকে। 


২/জ্বর এবং কাঁপুনি থাকাঃ অনেক সময় জ্বর এবং কাঁপুনি হয়ে থাকে। 


৩/ স্থূলতা: যখন কোন ব্যক্তির শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত মাএায় বেড়ে যায় তখন সেই ব্যক্তির শরীরে টিস্যু বেশি থাকে। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে পায়ের উপর বেশি চাপ পড়ে। যার কারণে গাউট হওয়ার প্রবনতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে হাঁটু, হাতের আঙুল, পায়ের বুড়া আঙুলে অনেক ব্যাথা অনুভব হয়ে থাকে। 


৪/ যে স্থানে ব্যাথা অনুভব হয়ে থাকে সেই অংশে লালচে ভাব দেখা দেয়। 


৫/ যখন খাদ্যের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে পিউরিন থাকে তখন গাউট দেখা দিয়ে থাকে। 


৬/ অনেকে ধারণা করেন যে, পরিবেশগত এবং জিনগত কারণেও কিছু কিছু মানুষের মধ্যে গাউট দেখা দিয়ে থাকে। 


৭/ এগুলো ছাড়াও ট্রমা, সার্জারি, রেনাল অপ্রতুলতা এবং কিডনির অন্যান্য সমস্যার মতো কারণ গুলোও গাউট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।




গাউটের প্রতিরোধ

১/ সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন ব্যায়াম করা যাতে করে মানুষের শরীরে থাকা ইউরিক এসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে সাহায্য করে। সেইসাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এতে করে শরীরের ইউরিক অ্যাসিড নির্গত হওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে গাউটের ঝুঁকি কমাতে পারে।


২/ অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গুলো গাউটকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। লিভার, কিডনিকে ক্ষতি করে এমন খাবার যেমন- তৈলাক্ত মাছ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস যুক্ত খাবার বা পরিপূরক ভাবে এড়িয়ে চলতে হবে । কম চর্বিযুক্ত, দুগ্ধজাত খাবার গাউট থেকে রক্ষা করে বলে মনে হয়। কারণ দুধের প্রোটিন শরীরের ইউরিক অ্যাসিড অপসারণের ক্ষমতা বাড়ায়।


৩/ প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ টি করে চেরি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ চেরি খাওয়ার ফলে গাউটের প্রবনতা অনেকাংশে কমে যায়।  


৪/ ঘরোয়া উপায় হিসেবে গাউট অনেক ভাবে নিরাময় করা সম্ভব। ধনিয়াপাতা এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে কিছু ক্ষন সিদ্ধ করার পর সেই পানি পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। অনেকে আছে ধনিয়া পাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না৷ তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে শসা, লেবুর রস এগুলো পান করতে পারেন। কিছু দিন এগুলো নিয়মিত খাওয়ার ফলেও গাউটের অনেক উপকার পাওয়া যায়। 


৫/ আরেকটি নিশ্চিত প্রতিকার হলো দুই থেকে তিন টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগারের সাথে আধা চা-চামচ অ্যালুমিনিয়াম-মুক্ত বেকিং সোডা প্রতিদিন তিনবার খেতে হবে। খাবার খাওয়ার আধাঘন্টা আগে এটা খেতে হবে। 


৬/ যেসব ব্যক্তিরা চা এর প্রতি বেশি আর্কৃষ্ট তাদের গাউট হওয়ার সম্ভবনা কিছুটা বেশি রয়েছে৷ চা আসক্তরা একজন সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে তিনগুণ বেশি প্রস্রাব করে। তবুও শরীরে থাকা বিষাক্ত পদার্থগুলি বের হয় না। বরং এর পরিবর্তে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে যা গাউট এবং আর্থ্রাইটিসের কারণ হয়।




গাউটের চিকিৎসা

গাউটের চিকিৎসা সাধারণত ব্যাথার চিকিৎসা মতোই অনেকটা। অনেক মানুষ আছে যারা গাউট হলে বিষয়টাকে এড়িয়ে যায়৷ এটাকে একেবারে এড়িয়ে গেলেও চলবে না বরং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। গাউট ভালো হতে বেশি সময় লাগে না। সঠিক ভাবে চিকিৎসা করানো হলে গাউট ৩ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু ঔষধের মাধ্যমেও গাউট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে:


১/ ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস: এই ঔষধ গুলো ব্যাথা কমাতে এবং জয়েন্টগুলোতে ফোলা কমাতে সাহায্য করে। সর্বাধিক প্রচলিত কিছু ঔষধ হলো আইবুপ্রোফেন এবং ন্যাপ্রক্সেন


২/ ব্যাথা থেকে কিছু উপশমের জন্য অনেকে আইসিং ব্যবহার করে থাকে। 


৩/ কর্টিকোস্টেরয়েড: গাউট থেকে ব্যাথা এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য, চিকিৎসকরা কর্টিকোস্টেরয়েডও লিখে দিয়ে থাকেন। এগুলি সাধারণত এমন লোকদের দেওয়া হয় যারা এনএসএআইডি নিতে পারে না।


Share

You May Like

Cloud categories

flatulence sunburn skin diseases gastric ulcer skin grafts iron supplement helicobacter pylori obesity helicobacter pylori infection tension hiv jaundice glaucoma dry mouth stroke dementia neck pain myalgia swine flu burning neurosyphilis wounds common cold gonococcal urethritis scabies warts malnutrition cardiovascular disease cuts burns healthy skin skin cold sores diphtheria stiff neck indigestion

দিন দিন ডিপ্রেশন বেড়ে যাচ্ছে কি

বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের অন্যতম বড় সমস্যা ডিপ্রেশন। আমাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকী ন ...

1 Like

কেন ডাক্তাররা সিজার করেন? জেনেনিন সিজার করার কারণ সমূহ

স্বাভাবিক ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ হলে মা ও শিশুর সুস্থতার স্বার্থে সিজার পদ্ধতিতে ডেলিভারির প্ ...

2 Like

আপনি কি অ্যালকোহল পান করেন ? কিছু বিষয় যেনে পান করুন

অ্যালকোহল এমন একটা পানীয় যা দেখলেই পান করতে মন চায়। আগের দিনে অ্যালকোহল জলের বিকল্প হিসেব ...

2 Like

হটাত জ্বরে আক্রান্ত হলে করনীয়

জ্বর কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। অনেক জ্বরেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। জ্বর হলে ...

1 Like

যে সব খাবার অল্প বয়সেই আপনাকে বিপাকে ফেলতেপারে

প্রাত্যহিক জীবনে কতো কিছুই না খাওয়া হয়। কিন্তু সবকিছু কি আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া যায়? ...

0 Like

ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে অ্যাসিডিটি থেকে রেহাই পাবেন

অ্যাসিডিটি মানেই পেটের সর্বনাশ! কখনও বুকজ্বালা, কখনও ঢেঁকুর আবার কখনও বায়ুর চাপ। এরপর তেলজ ...

0 Like

কিছু অপ্রচলিত খাবার যেগুলো প্রয়োজনে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়

১. ক্যাকটাস: ক্যাকটাস গাছের পাতা সাধারণত কাটাযুক্ত হয়ে থাকে। দক্ষিন আমেরিকায় এই গাছ বেশি জ ...

0 Like

পেটের চর্বি কমানর সহজ কিছু ব্যায়াম। পর্ব ১

পেটের চর্বি কি আপনার ঘুম হারার করে দিয়েছে? আজকাল ছোট বর অনেকেই এই সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু ...

1 Like