Health experience | Write here | Write and share your health experience to help community.

বিষণ্ণতা

Fahima Akter Wednesday, August 25, 2021


বিষন্নতা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের অধিকাংশ অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা বিষন্নতায় বেশি ভোগে থাকে। বিষন্নতা এমন একটি নির্দিষ্ট ব্যাধি, যাকে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন বলা যেতে পারে। ক্লিনিকাল বিষণ্নতা হলো যখন কোন ব্যক্তি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের বেশি নিজেকে দুঃখ, উদ্বিগ্ন, আশাহীন এবং হতাশাবাদী বোধ করেন। বিষন্নতাকে শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলা যাবে না অনেকে এটিকে মন খারাপের সাথেও তুলনা করেছেন। 


বিষন্নতার কারণ ও লক্ষণ

বেশিরভাগ সময়ই মানসিক সমস্যার রোগগুলি বোঝা কঠিন। বিষন্নতা বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে হতে পারে যেমন- জৈবিক, পরিবেশগত এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণে। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে বিষন্নতার প্রভাব বেশি শুরু হয়। ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যার মতো অন্যান্য রোগের কারণেও বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। অসুস্থতার সময় নানা রকম ঔষধের প্রভাবের কারণে মানুষকে হতাশার মধ্যে পড়তে হয় । এছাড়াও অন্য শহরে স্থানান্তর, সম্পর্কের সমস্যা, আর্থিক সমস্যা, পরিবারের ভাঙ্গন, চাকরি চলে যাওয়া, যৌন নির্যাতন, কঠোর রোগ হওয়া, এগুলোর কারণেও মানুষ বিষন্নতায় ভোগে। 


আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য মানুষ বিষন্নতায় থাকে। যেমন-

১/ মানসিক আঘাত : অতীতে যে কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হলে মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে থাকে। কোন ব্যক্তিকে যখন অকারণে অপব্যবহার করা হয় তখন মানসিক ভাবে সেই ব্যক্তি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। 


২/ জেনেটিক ফ্যাক্টর: অনেক পরিবার রয়েছে যারা সুনির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই বিষন্নতার মধ্যে থাকে। সেইসব পরিবারের ভবিষ্যত প্রজন্মেরাই অল্প কারণেই বিষন্নতায় থাকে।


৩/ প্রিয়জনকে হারানো: প্রিয়জন হারানো ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে থাকে। কিছু ব্যক্তি অনেক বেশি কষ্টের মধ্যে দিয়ে সেই সময় পার করে এবং বিষণ্নতায় ভোগে। 


৪/ জীবন পরিবর্তনের ঘটনা: জীবন পরিবর্তনকারী কিছু ঘটনা যেমন চাকরির অবসান, আর্থিক ক্ষতি, দেশ পরিবর্তন, সম্পর্কের সমস্যা ইত্যাদি বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে।


এক ধরনের বিষণ্নতা আছে যাকে বলা হয় সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি)। এই বিষন্নতা শুধুমাত্র আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় রোগীদের কষ্ট দেয়। সাম্প্রতিক এক তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে যে, প্রায় ৫ শতাংশ আমেরিকান মানুষেরা এই ধরনের বিষণ্নতায় ভোগে থাকে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলেও মানুষ নানা রকম বিষন্নতার মধ্যে ভোগে। বিষন্নতার লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। বিষন্নতার প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব লক্ষন গুলো দেখা দেয় :  


১. ক্লান্তিকর ভাব এবং কম শক্তি।

২. শরীরে ব্যাথা, মাথাব্যাথা এবং খিঁচুনি যার স্পষ্ট শারীরিক কারণ নেই। 

৩. মেজাজ খিটখিটে ভাব। 

৪. অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম।

৫. অপরাধবোধ, মূল্যহীনতা বা অসহায়ত্ব অনুভব করা।

৬. পছন্দ করা ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ হারানো।

৭. একাগ্রতা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা।

৮. খাবারের প্রতি অরুচি।

৯. ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস।

১০. অসুস্থ এবং আত্মঘাতী চিন্তা।

১১. আত্মবিশ্বাস হারানো ।


হতাশার চারটি রূপ রয়েছে যা কিছুটা ভিন্ন, যেমন- 

ক. ক্রমাগত বিষণ্নতা ব্যাধি 

খ. পেরিনেটাল ডিপ্রেশন

গ. মানসিক বিষণ্নতা

ঘ. মৌসুমী প্রভাবশালী ব্যাধি



বিষন্নতার প্রতিরোধ

১. কোন কাজে ব্যস্ত থাকা বিষণ্নতা রোধে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু নিজেকে অতিরিক্ত কাজের চাপের মধ্যে রাখা যাবে না এতে করে মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। 


২. বিষণ্নতা রোধ করার অন্যতম উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম একটি এন্টিডিপ্রেসেন্ট হিসাবে বিবেচিত হয় এবং স্ট্রেসের প্রতিষেধকের মতো কাজ করতে পারে।


৩. নিজেকে মজাদার ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত করতে হবে। কারণ এটি ব্যক্তির মনোযোগ সরাতে সহায়তা করতে পারে।


৪. যেকোনো রকমের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। ইতিবাচক কাজ হতাশা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। 


৫. শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের উপরই নজর দিলে হবে না, সেই সাথে শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়াও বিষণ্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। 


৬. যখন কোন ব্যক্তি বিষন্নতার শিকার হয়ে থাকে, তখন তার আশে পাশে ঘটে যাওয়া প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য মানসিকভাবে সে নিজেকে দায়ী করে থাকে । নিজেকে আঘাত করা বন্ধ করতে হবে, কারণ এটি মারাত্মক জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।


৭. পুষ্টিকর খাদ্য এবং ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যর পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য মানুষের মেজাজ ভালো করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অ্যালকোহল এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। 


৮. অতিরিক্ত বিষন্নতা বোধ করলে মোটেই একা একা রুমে বসে থাকা উচিত নয়। সেই সময় কাছের বন্ধু এবং পরিবারের সাথে কথা বলতে হবে। লজ্জা বোধ না করে পরিবারের সাথে বিষন্নতায় থাকা বিষয়ে আলোচনা করে ভালো চিকিৎসক দেখাতে হবে।  


৯. সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


বিষন্নতার চিকিৎসা

বিষণ্নতার চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে রোগী কোন ধরনের বিষন্নতায় ভোগছে সেটার উপর। এজন্য সঠিক রোগ নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এন্টিডিপ্রেসেন্টস, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং সাইকোথেরাপির সমন্বয় ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা ব্যক্তির বিষণ্নতার লক্ষণগুলি মোকাবেলা করতে সহায়তা করে। বিষন্নতা ঠিক কোন পর্যায়ে আছে এটা ঠিক মতো ধরা না গেলে এন্টিডিপ্রেসেন্টস এবং থেরাপি কাজ করবে না। সেইজন্য একজন ভালো মনোবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে বিষন্নতা নিয়ে ভালো ভাবে পরামর্শ করতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। 



Share

You May Like

Cloud categories

calcium supplement psoriasis fertility ankylosing spondylitis lactose intolerance restlessness excessive sweating cholera renal insufficiency salmonellosis polycystic ovarian disease brain tumors dry skin anxiety allergic rhinitis vomiting children and adults hyperuricemia nausea and vomiting jaundice lichen planus flu hair loss severe allergies bradycardia osteoarthritis diphtheria bipolar disorder reduces wrinkles hepatic encephalopathy ischemic stroke rheumatoid arthritis bone irritable bowel syndrome shoulder pain itching

নাক বন্ধ হলে এন্টাজল দিলে কি ক্ষতি হয়?

 নাক বন্ধে নাকের ড্রপ ব্যবহারে কি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?উত্তর: কিছু কিছু নাকের ...

0 Like

হোমিওপ্যাথি কিভাবে কাজ করে ? চিকিৎসা নেয়ার আগে কিছু পরামর্শ

হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা বিজ্ঞান । মনেরাখতে হবে যে, রোগের লক্ষণগুলোই রোগের প ...

0 Like

হোমিওপ্যাথি কিভাবে কাজ করে ?, চিকিৎসা নেয়ার আগে কিছু পরামর্শ

হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা বিজ্ঞান । মনেরাখতে হবে যে,রোগের লক্ষণগুলোই রোগের পর ...

0 Like

যে সব খাবার অল্প বয়সেই আপনাকে বিপাকে ফেলতেপারে

প্রাত্যহিক জীবনে কতো কিছুই না খাওয়া হয়। কিন্তু সবকিছু কি আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া যায়? ...

0 Like

কিছু অপ্রচলিত খাবার যেগুলো প্রয়োজনে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়

১. ক্যাকটাস: ক্যাকটাস গাছের পাতা সাধারণত কাটাযুক্ত হয়ে থাকে। দক্ষিন আমেরিকায় এই গাছ বেশি জ ...

0 Like

শীতকালে সর্দি, কাশি, নাক বন্ধ স্বাভাবিক ব্যাপার তবে যারা দীর্ঘদিন নাকের ড্রপ ব্যবহার করছেন তাদের কিছুটা সতর্ক হওয়া দরকার

কিছু কিছু নাকের ড্রপ আছে যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে স্যাল ...

2 Like

রোজায় চোখ বা নাকের রোগীদের ড্রপ ব্যবহারে যে সমস্যা হয়

রোজায় চোখ বা নাকের রোগীরা যে সমস্যায় পড়েন সেটি হল রোজা রাখা অবস্থায় ড্রপ ব্যবহার করতে পারব ...

1 Like

দৈনিক যে সমস্ত কাজ আমাদের ভাল রাখতে পারে

দৈনিক ১টি আপেল খান।     কোন ডাক্তার লাগবে না! দৈনিক ৫টি বাদা ...

0 Like