Health experience | Write here | Write and share your health experience to help community.

মানুষ কেন দুঃস্বপ্ন দেখে ? কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন ?

Fahima Akter Saturday, August 14, 2021


দুঃস্বপ্ন দেখার ফলে একেক মানুষের উপর একেক প্রভাব পরে। অনেকে রাতের বেলা দুঃস্বপ্ন দেখে ভয়ে শেষ হয়ে যায়। আবার অনেকে এই দুঃস্বপ্নকে পাত্তাই দিতে চায় না। কেউ কেউ ধারণা করে এটা শুধু তরুণরাই দেখে। কিন্তু না প্রাপ্তবয়স্করা দুঃস্বপ্ন বেশি দেখে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা প্রায় ৭০%। 


দুঃস্বপ্ন যে কোন বয়সে বা অতীতের উদ্বেগ বা ভীতিকর ঘটনার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখার অভ্যাস অনেক মানুষেরই তবে এই বিষয়কে এড়িয়ে চলা ঠিক না। এই ভাবে ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখলে ঘুমের অনেক ব্যাঘাত ঘটে। যার কারণে নানা রকম শারীরিক / মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। রাতের অর্ধেক সময় ঘুমালে আর অর্ধেক সময় জেগে কাটালে মন সবসময় বদমেজাজি হয়ে থাকে। সেই সাথে শরীরে সারাদিন তিক্ত ভাব আসে। যার কারণে দুঃস্বপ্ন যাতে না দেখতে হয় সেই বিষয়ের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। যেমন-


১. ঘুমের ১ ঘন্টা আগে স্মার্টফোন কাছে না রাখা : স্মার্ট ফোন থেকে নীল আলো চোখের উপর পরে। বেশিরভাগ মানুষই ঘুমের ১ মিনিট আগেও এই ফোন ব্যবহার করে থাকে। যেটা একে বারেই উচিত না। অনেক সময় দেখা যায় কিছু ক্ষন না ঘুমাতেই শরীর কাপনি দিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। এটা হওয়ার অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে ঘুমানোর কত ক্ষন আগে স্মার্ট ফোন দূরে রাখা হয়েছিলো। মানুষের শরীরে মেলাটোনিন নামে একটা হরমোন থাকে, যেটা ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। স্মার্টফোনের থেকে আসা নীল আলো মেলাটোনিনের সাথে মিশে যায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। 


২. সন্ধ্যার পর চা এবং কফি এড়িয়ে চলা : অনেকেই আছে যারা চা / কফি খাওয়ার পর আর তাদের ঘুম আসতে চায় না। প্রতিটি মানুষেরই উচিত সন্ধ্যার পরে এই জিনিস এড়িয়ে চলা। কেননা চা / কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন নামে একটি উপাদান। যেটা শরীরের মধ্যে অ্যাড্রেনালিন এমন ভাবে উৎপাদন করে থাকে যার কারণে ঘুমের অনেক ব্যাঘাত ঘটে। 


৩. ঘুমের আগে গোসল করা : ঘুমানোর এক / দেড় ঘন্টা আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা ভালো। এতে করে শরীরের সারাদিনের ক্লান্তিকর ভাবটা চলে যায়। সেই সাথে মেলাটোনিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এতে করে ভালো ঘুম হয় এবং রাতে ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা থাকে না। 


৪. দিনের বেলা কিছু পরিশ্রম করা : যেসব মানুষের সারা দিন পরিশ্রম করে তাদের রাতের ঘুম ভালো হয়। তারা দুঃস্বপ্ন খুবই কম দেখে থাকে। সারাদিনের পরিশ্রম শরীরকে ক্লান্তি করে দেয়। যার ফলে শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসে।


৫. ঘুমের আগে মানসিক চাপ মুক্ত থাকা : মানসিক চাপ খুবই খারাপ জিনিস। ঘুমের আগেও যদি কেউ কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা করে থাকে সেটা ঘুমের উপর প্রভাব পরে থাকে। গভীর চিন্তা মানুষকে ঘুমের মধ্যে জাগিয়ে তুলে। এটা শরীরের জন্য খুবই খারাপ। যার কারণে ঘুমের আগে অবশ্যই কোন দুঃচিন্তা করা যাবে না। প্রয়োজন হলে গান শুনতে হবে, ধ্যান করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে অনেকটা মানসিক চাপ মুক্ত থাকা যায়। মানসিক চাপ কম থাকলে দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। 


এছাড়াও মানুষ দৈনন্দিন জীবনে অসুখী, উত্তেজিত বা উদ্বিগ্ন থাকে, তাহলে এগুলো ভারসাম্যহীন মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তির দুঃস্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা বেশি।


বিভিন্ন রকম ঔষুধ মানুষের মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াগুলিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে যার ফলে দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা বেশি থাকে । যেমন- রক্তচাপের, এন্টিডিপ্রেসেন্টস রোগের ঔষধ গুলি সাধারণত দুঃস্বপ্ন কারণগুলির সাথে যুক্ত। যখন কোন ব্যক্তি জীবনে গুরুতর আঘাত, শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, বা অন্যান্য আঘাতমূলক ঘটনার মতো দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়, তখন এটি অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, যা তখন এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনাকে দুঃস্বপ্নের দিকে নিয়ে যায়। 


ঘুমানোর আগে হরর সিনেমা, ভূতের বই, সাসপেন্স শো মানুষকে ভয়ঙ্কর স্বপ্নের অভিজ্ঞতা দিতে পারে। এটি মানুষকে ভীত করে তুলতে পারে। ঘুমানোর আগে যখন মানুষ এই ধরনের শো থেকে ভয়ঙ্কর দৃশ্যগুলি চিন্তা করে এবং পুনর্বিবেচনা করে তখন কিছু ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন জন্ম দিতে পারে। এমনকি মানুষ যদি মানসিক চাপে না থাকে বা হরর মুভি না দেখেন কিন্তু তবুও দুঃস্বপ্ন দেখার সম্ভাবনা থাকে। করন, সেটা হতে পারে ঘুমানোর আগে মানুষের খাওয়া বা পান করার অভ্যাসের কারণে। ভুল ঘুমের রুটিনও দুঃস্বপ্ন জন্ম দিতে পারে ।


দুঃস্বপ্ন এড়ানোর রহস্য

দুঃস্বপ্ন এড়ানোর রহস্য হল একটি সুষম ঘুমের রুটিন মেনে চলা। ঘুমানোর আগে গোসল এবং ব্রাশ করার মতো স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনগুলি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে মানুষের শরীর শান্ত হয়ে যায় এবং রাতের ঘুমের জন্য প্রস্তুত থাকে। অপ্রয়োজনীয় ক্রিয়াকলাপ এড়িয়ে চলাই ভালো যেমন - রাতে মুভি দেখা, রাত জেগে গেমস খেলা ইত্যাদি। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস মানুষের ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে পারে। ধ্যান এবং যোগের মাধ্যমে সারাদিনের মানসিক চাপ উপশম করতে হবে । মানুষের শরীরকে প্রশান্ত করতে এবং মানসিক চাপ দূর করার জন্য কিছু কার্যকর শ্বাস -প্রশ্বাসের ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘস্থায়ী দুঃস্বপ্ন কমাতে এটি সর্বোত্তম কৌশল।


কিছু কিছু ঔষধ মানুষের শরীরকে অনেক বেশি দুর্বল করে দেয়। শরীর বেশি দুর্বলতার জন্য রাতে উলটা পালটা কথা বলতে থাকে সেই থাকে দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা থাকে। ঔষধের কারণে এমনটা হলে অবশ্যই ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে এই ধরনের অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ ঔষধের বিকল্প কিছু খুঁজে নিতে হবে। এছাড়াও রাতে যারা ভয় বেশি পায় তাদের জন্য রাতের ভূতের বই পড়া এড়িয়ে চলাই ভালো। ভয়ঙ্কর সিনেমা দেখাও এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এটি অবশ্যই দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। 


উদ্বেগ দূর করার জন্য, বাবা -মা, দাদা -দাদি বা বন্ধু কারো সাথে অতীতের ঘটনাগুলি সম্পর্কে কথা বলার চেষ্টা করুতে হবে যার ফলে ভয় অনেক কমবে । সেই ভয়াবহ অতীত থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তারা সান্ত্বনা দিবে যাতে করে এই ভয় কাটিয়ে ওঠা যায়। ইতিবাচক উপায়ে দুঃস্বপ্ন এবং মানসিক চাপ মোকাবেলার জন্য নানা রকম লেখালেখি করা যেতে পারে। 


দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নিরাময় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতার ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে । থেরাপিউটিক সহায়তার জন্য সোয়ার থেরাপি, ইমেজ রিহার্সাল থেরাপি, সুস্পষ্ট স্বপ্ন দেখার চিকিৎসা এবং আধুনিক পেশী রিলাক্সেসন মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে পারে।


Share

You May Like

Cloud categories

cervicitis whooping cough cardiovascular disease stiff neck dry pain itching and pain hiv infection. excessive sweating aggression bradycardia fever carcinomas pertussis skin grafts dermatitis gastric ulcer measles skin rash cold sores hiv / aids nutritional supplement lubrication gastric problems neurosyphilis asthma cobra migraine generalized anxiety disorder low blood pressure iron deficiency swine flu trauma itching calcium supplement tension

অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয় সাথে বারে ওজন

ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে পারেন না অথবা অনেকে বিছা ...

1 Like

আয়ুর্বেদ অনুযায়ী পেটের চর্বি গলানোর ৯ টি সহজ উপায়

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই ওজন কমানো নিয়ে অনেক বেশি চিন্তার মধ্যে থাকে। ভুল খাদ্যভাসের জন ...

1 Like

মানুষ কেন দুঃস্বপ্ন দেখে ? কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন ?

দুঃস্বপ্ন দেখার ফলে একেক মানুষের উপর একেক প্রভাব পরে। অনেকে রাতের বেলা দুঃস্বপ্ন দেখে ভয়ে ...

0 Like

কেন মানুষের মন খারাপ থাকে ? কিভাবে মানুষিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখবেন ?

মন নিয়ে সঠিক সংজ্ঞা এখনো পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। মন অনেক জটিল একটা জিনিস। মন এমন একটা বিষ ...

0 Like

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রতিদিনের যেসব অভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ

হাইডেলবার্গের বিজ্ঞানিরা বলেছেন যে, মানুষের অন্ত্রে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে থাকে। ...

0 Like

আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে বাড়িয়ে তুলবেন?

মানুষের সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে সারাবিশ্বে গবেষকরা নানা রকম আলোচনা চালিয়া যাচ ...

0 Like

যেভাবে হাতের যত্ন নিতে হবে

বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মহামারী চলছে। আর এই মহামারিতে হাতের যত্ন এক ...

0 Like

টেস্টোস্টেরন কি ? এটা কিভাবে যৌন ক্রিয়া, আবেগ সহ বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান করে

টেস্টোস্টেরন একটি যৌন হরমোন যা পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যেই উপস্থিত থাকে। যদিও এটি তুলনাম ...

0 Like